বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এবং শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট এটা আমাদের সকলের জেনে রাখা জরুরি। কারণ আপনি যদি অতীতের দিন গুলোর সাথে বর্তমান সময়ে এর তুলনা করেন, তাহলে বেশ ভালো ভাবে লক্ষ্য করতে পারবেন যে বর্তমান সময়ে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ডায়াবেটিস হওয়ার পাশাপাশি বাচ্চাদের ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই দিক থেকে খুব সহজে অনুমান করা যায় যে এখন শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক মানুষরা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয় না বরং এই প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সাথে সাথে যারা অল্প বয়সী তাদেরও ব্যাপক পরিমাণে ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগে একটি শিশু স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি দুই ভাবেই আক্রান্ত হতে পারে।
তবে বর্তমান সময়ে প্রায় সব মানুষের কম বেশি ডায়াবেটিস থাকে এবং ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। যার কারণে একটি শিশুর যখন ডায়াবেটিস নামক এই রোগের আক্রান্ত তখন আমরা বেশ হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু এই হতাশ হওয়ার আগে আমাদের বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষন এবং শিশুদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।

আমাদের আজকের এই পোস্টটিতে শিশুদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এবং বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষন ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়াও ডায়াবেটিস সম্পর্কে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় নিয়ে আলচনা হবে। আশা করছি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়বেন। তাহলে আর দেরি না করে চলুন সরাসরি মূল আলোচনা তে ফিরে যাওয়া যাক এবং জেনে নেওয়া যাক যে শিশুদের ডায়াবেটিস এর লক্ষন এবং বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল।
ডায়াবেটিস কী?
ডায়াবেটিস হলো বহুমূত্র রোগ, এটি মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। অনেক সময় দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা আমাদের শরীর উৎপন্ন হওয়া ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, আর এই ইনসুলিন তৈরি করতে না পারা এবং ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হওয়ার ফলে যে রোগ দেখা দেয় তাকেই মূলত ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’ বলে। এই সময় রক্তে চিনি বা শকর্রার মাত্রা উপস্থিতি জনিত অসামঞ্জস্য দেখা দিতে পারে।
বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষন?
উপরের আলোচনা থেকে আপনি জানতে পেরেছেন যে, ডায়াবেটিস রোগ কাকে বলে। এখন এই বিষয় টি জানার পাশাপাশি আপনাকে শিশুদের ডায়াবেটিস এর লক্ষন কি কি এই বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। কারণ আপনার বাচ্চা ডায়াবেটিস আক্রান্ত কিনা আপনাকে বুঝতে হবে। বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষন গুলো যদি আপনি না জানেন তবে আপনার বাচ্চা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক ঝুঁকিতে চলে যাবে।

আর এবার আমি এই বিষয় টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। যখন কোন একটি শিশু ডায়াবেটিস নামক এই মারাত্মক রোগের আক্রান্ত হবে তখন সেই শিশুদের মধ্যে আপনি বেশ কিছু লক্ষণ দেখে নিশ্চিত হতে পারবেন, যেমন:
বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষন:
- সেই শিশুর তলপেটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা অনুভূত হবে। এবং এই ব্যথা ক্ষণিকের জন্য থেমে থাকবে। আবার কিছু সময় পরে পুনরায় সেই ব্যথা শুরু হবে।
- একটি শিশু স্বাভাবিক ভাবে যতবার প্রস্রাব করে। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে সেই শিশুর মধ্যে প্রসাব করার প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। এবং বারবার প্রসাব করতে চাইবে।
- কোন কারণ ছাড়াই সেই শিশু টি অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়বে। যেমন টা অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি ভাবে উক্ত শিশুটিও ক্লান্ত হয়ে পড়বে।
- স্বাভাবিক ভাবে একটি শিশুর চোখের দৃষ্টি অনেক ভালো হয়ে থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে সেই শিশু টি চোখে দেখতে অনেক সমস্যা হবে।
- বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই সেই শিশুর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একেবারেই অবশ হয়ে পড়বে।
- যদি কোন কারনে সেই শিশুটির আঘাত পাওয়ার পরে ক্ষত হয়। তাহলে সেই ক্ষত শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগবে। যেটা একেবারেই অস্বাভাবিক।
- ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে শিশুর ওজন ক্রমাগত ভাবে কমতে থাকবে। এবং ধীরে ধীরে সেই শিশুটির ওজন একবারই কমে যাবে।
- রক্তচাপের মাত্রা বিপুল পরিমাণে কমে যাবে।
যখন আপনি উপরের এই বৈশিষ্ট্য গুলো কোন একটি শিশুর মধ্যে লক্ষ্য করতে পারবেন, তখন আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে, সেই শিশু টি মূলত ডায়াবেটিস নামক এই মারাত্মক ব্যাধি তে আক্রান্ত হয়েছে এবং আপনার অতি দ্রুততার সাথে সেই শিশুর সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।
বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?
এবার আমি শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। বড়দের পাশাপাশি এখন শিশুদেরও ডায়াবেটিস হয়। তবে বিশেষ করে শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয় । যত দিন যাচ্চে এর প্রকোপ বেড়েই চলেছে । তবে যদি সঠিক সময় এই রোগ ধরা পড়ে এবং যদি সময় কার্যকরী চিকিৎসা নেয়া যাই তবে শিশুদের এই রোগ থেকে সুস্থ করা সম্ভব।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, আমাদের দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭০ লাখ প্রায়। তার মধ্যে ১৭ হাজারের বেশি শিশরা রয়েছে যারা টাইপ ১ ডায়াবেটিসে ভুগছে। সাধারণত যখন বয়স ৫ অথবা ২০ বছর পর্যন্ত থাকে তখন পর্যন্ত টাইপ১ ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

5 থেকে 11 বছর বয়সী শিশুদের জন্য, ন্যাশনাল ডায়াবেটিস এডুকেশন প্রোগ্রাম (NDEP) ছেলেদের জন্য 140 mg/dl এবং মেয়েদের জন্য 120 mg/dl এর নিচে রক্তে শর্করার মাত্রা সুপারিশ করে। যাইহোক, অনেক শিশু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে রক্তে শর্করার মাত্রা 200 mg/dl এর নিচে সমস্যাযুক্ত কারণ এটি পরবর্তী জীবনে গুরুতর ডায়াবেটিক জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
শিশুদের স্বাভাবিক রক্তে শর্করার মাত্রা 99 mg/dL বা তার কম এবং খালি পেটে 5.6 mmol/L বা তার কম। রক্তে শর্করার মাত্রা ধারাবাহিকভাবে বেশি হলে ডায়াবেটিস হতে পারে।
বাচ্চাদের ডায়াবেটিস হলে কি করা উচিত?
শিশুদের ডায়াবেটিস হয় ইনসুলিন হরমোনের অভাবে। ইনসুলিন শক্তির জোগান দেয় রক্তের গ্লুকোজ ব্যবহার করে এবং ইনসুলিন গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। শিশুদের অথবা বয়স্কদের যদি ইনসুলিন হরমোনের মাত্রা কমে যাই তখন রক্তে রক্তের গ্লুকোজ অনেক পরিমান বেড়ে যায়। তখন শরীর বিকল্প পথ অবলম্বন করে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করে আমিষ ও চর্বি থেকে। আর এ কারণেই অস্বাভাবিক ভাবে রক্তের ভিতরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে শুরু করে।

এর ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে শুরু করে। ওজন হ্রাস পেতে থাকে। আক্রান্ত শিশুর গলা ও বুক শুকিয়ে যায় এবং শিশুটি বারবার পানি খেতে চাই। রক্তে যখন অতিরিক্ত বিষাক্ত কিটন বডিস জমে যাই তখন হঠাৎ অচেতন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। এমন সময় যদি ইনসুলিন ব্যবহার করে দ্রুত চিকিৎসা না করানো হয় তবে শিশুটি মারাও যেতে পারে।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলে এর প্রধান চিকিৎসা হলো ইনসুলিন। যদি ইনসুলিন না নেন তবে আপনার শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে। আক্রান্ত হওয়া শিশুকে প্রতিদিন প্রায় ১ঘণ্টা বা তার বেশি করে শারীরিক ব্যায়াম বা খেলা ধুলা করানোর অভ্যাস করতে হবে। তারপরে ভালো পুষ্টিবিদদের পরামর্শে নিতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী আপনার শিশুর জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে সাথে হেলদি ভাবে ডায়েট কন্ট্রোল রাখতে হবে। পরিশোধিত চিনি বা যে সব খাবারে চিনি থাকে সে সব খাবার বর্জন করাতে হবে।
সবুজ শাক, টাটকা সবজি, মাছ, ডিম খাওয়াতে হবে এবং ভাজাভুজি, তেলযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে।
শেষ কথা:
আজকে আমরা এই নিবন্ধ থেকে জানতে পারলাম বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এবং বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষন কী। এছাড়াও বাচ্চাদের ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি এ বিষয়েও ধারণা পেয়েছি। তবে শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট এবং শিশুদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল সে সম্পর্কে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে বা যদি আরো কিছু জানার থাকে তবে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।