নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

উপকারী উদ্ভিদগুলির মাঝে নিম গাছের গুরুত্ব কোনোমতেই ফেলে দেবার মতো নয়। নিম পাতা খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা আমরা অনেকেই জানি না। যেকোনো অসুখ-বিসুখে হাই লেভেলের মেডিসিনের মতোই কাজ করে নিম পাতা। নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলের জেনে রাখা উচিৎ। নিম পাতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনার আশেপাশে নিম গাছ আছে মানেই আপনি আস্ত একটা ঔষধ কোম্পানির পাশে বাস করছেন! এমনটা বলার অন্যতম কারণ হলো এই পাতা মানুষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকার করে থাকে। তবে এসব উপকার ভোগ করতে হলে নিয়ম এবং ঠিক কোন কারণে, কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করতে হয় সে-সম্পর্কে জানা প্রয়োজন!

নিম পাতা খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায়?

এই পর্যায়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং  নিম পাতা খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায় সে – সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

নিম পাতার উপকারিতা কি?

শুরুতেই বলে রাখি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে উল্লেখ করা প্রতিটি টিপস এন্ড ট্রিকস কিন্তু বিভিন্ন রিসার্চ প্যাপার এবং বিশ্বস্ত সুত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যার কারণে প্রতিটি তথ্যকেই আপনি অথেনটিক এবং বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে ধরে নিতে পারেন৷ তাছাড়া যে যে উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তার প্রতিটি পয়েন্টই কিন্তু আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত!

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

নিম পাতা কিন্তু মানব-শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে পেট খালি রেখে তবেই নিম পাতা খেতে হবে। এক্ষেত্রে নিম পাতাতে যে নির্যাসটি রয়েছে মূলত সেই নির্যাসটিই মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে এটি দেহে থাকা গ্লাইকোপ্রোটিন টিউমারকে ছোট করে আনে। সুতরাং যারা গ্লাইকোপ্রোটিন টিউমারজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এই খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার ব্যাপারটি বেশ যুক্তিযুক্ত টেকনিক হিসেবে কাজ করতে পারে৷

এছাড়াও একদল গবেষক বলছেন নিম পাতায় ইমিউনোস্টিমুলেটিং রিলেটেড একধরণের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা শরীরের লিম্ফোসাইটিক সিস্টেমের কাজকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া শরীরে ক্ষতি করে এমন সব ভাইরাসও প্রতিরোধ করে এই নীম পাতা। তাই আমরা বলতে পারি যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিম পাতার উপকারিতা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

যারা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চান তারা আমাদের আজকের এই “নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা” সম্পর্কিত আর্টিকেলের চলমান পয়েন্টটিতে ফোকাস করতে পারেন। একটি গবেষণা অনুসারে, প্রাচীনকাল থেকেই নিম পাতার নির্যাস ক্যান্সারের মতো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বলে রাখা ভালো নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিটিউমার। যা ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও নীম পাতায় রয়েছে অ্যাজাডিরাকটিন এবং নিম্বোলাইডের মতো জৈব এক্টিভ যৌগ। এই যৌগ শরীরের ক্ষতিকারক কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে। এক্ষেত্রে ক্যান্সারের ভাইরাসকেও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

যারা শরীরের মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে চান কিংবা এর হাত থেকে বাঁচতে চান তারা নিম পাতার পেস্ট বা নিম পাতার রস খালি পেটে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩/৪ দিন খেতে পারলেই হলো! ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য নিম পাতার উপকারিতা অপরিসীম।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে:

আপনি জানেন কি, খালি পেটে নীম পাতা খাওয়া চোখের সংক্রমণের চিকিৎসা ও দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতেও বেশ উপকারী। দেহে চোখ ও কানের সংক্রমণ ঘটায় এমন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে ব্যর্থ করার ক্ষেত্রে নিম পাতার রসের জুড়ি মেলা ভার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো নীম পাতা সম্পর্কে এই একই ধরণের তথ্য দিচ্ছে আয়ুর্বেদ গবেষণা প্রকল্প।

অনেক সময় আমাদের চোখ অসম্ভব লালচে হয়ে যায়। আবার চোখে থাকা ছোট ছোট পেশীগুলিতে সমস্যাে সৃষ্টি হয় কিংবা এর পেশীগুলি আরো দৃশ্যমান হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে নিম পাতার রস খাওয়া যেতে পারে।

গবেষকরা বলছে চোখে ছানি পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো শরীরে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের উপস্থিতি। এক্ষেত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদ ছানি চিকিৎসায় বেশ কার্যকর ভুমিকা পালন করে থাকে। এদিকে একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো নীম পাতা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন চোখে ছানি পড়াজনিত সমস্যার ক্ষেত্রেও নিম পাতা বেশ উপকারী। বলা যেতে পারে যে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্যের ক্ষেত্রে নিম পাতার উপকারিতা অপরিসীম।

হার্টের সমস্যা দূর করে:

যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে এবং যারা আমাদের আজকের এই নিম পাতা খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায় শীর্ষক আর্টিকেলটি পড়ছেন তারা অবশ্যই নিম পাতা ট্রাই করতে পারেন। কেননা খালি পেটে নিম পাতা খাওয়া হার্টের জন্য বেশ উপকারী।

মানবশরীরে নিম পাতা রক্ত ​​জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। সেই সাথে এই নীত পাতা আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়! নিম পাতায় নিমবিডিন নামক একটি যৌগ থাকে। যা রক্তনালীকে বেড়ে উঠতে এবং বড় করতে সাহায্য করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।

এছাড়াও করোনারি হৃদরোগের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে নিম পাতাকে ব্যবহার করা হয়। কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী ঔষধ হিসেবেও খাওয়া যায় এই নিম পাতা। পাশাপাশি নিম পাতার নির্যাস উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও উপকারী ভুমিকা পালন করে থাকে।

এলার্জির ঔষধ নিম পাতা:

এলার্জি শব্দটির সঙ্গে আমরা বেশ সবাই মুটামুটি পরিচিত। এটি একটি অস্বস্থিকর ধরণের চুলকানি রোগ। এলার্জির কারণে অনেকেই অস্বস্তিতে ভোগেন এমন লোকের অভাব নাই। এলার্জির যে কতোটা ভয়ংকর সমস্যা, তা শুধু এলার্জির ভুক্তভোগীরাই জানেন।

এলার্জির ঔষধ হিসাবে নিম পাতা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম পাতা হল এলার্জির উপকারী বিশিষ্ট একটি ঔষধ। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্ট হয় এলার্জি। এলার্জি নিষ্কাশন করতে ব্যবহৃত করা হয় এলার্জির ঔষধ নিম পাতা। কিছু পরিমানে নিমের পাতা রাতে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরেরদিন সকালে ভেজানো সেই নিমের পাতা গুলো মাড়াই করে পেস্ট আকারে তৈরি করতে হবে। তার পর নিম পাতার সেই পেস্ট এলার্জির চুলকানি হওয়া জায়গায় ব্যবহার করতে হবে।

এভাবে কিছুদিন এলার্জির ঔষধ নিম পাতা ব্যাবহার করলে অনেক ভালো ফল পাবেন। এর সাথে কিছু খাবার আছে সে গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যেমনঃ গরুর দুধ, বাদাম, ডিম, সয়াবিন, চিংড়ি, ইলিশ, পুঁটি, শোল, বোয়াল, বেগুন, কচু, কুমড়া ইত্যাদি।

শরীরের টক্সিন দূর করে:

খালি পেটে নিম পাতা খেতে পারলে শরীরের টক্সিন দূর করতে কোনো অসুবিধা হবে না। নিম পাতায় থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ফিচার শরীরে ছত্রাকজনিত রোগের চিকিৎসা করতে সক্ষম। পাশাপাশি এই নিম পাতা ফুসফুস, মুখ, হাত এবং যোনির বিভিন্ন ছত্রাকজনিত রোগও প্রতিরোধ করে থাকে।

শরীরে প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার ক্ষেত্রে নিম পাতার গুরুত্ব প্রায় দেখার মতো। বলে রাখা ভালো, নিম পাতার নির্যাস গুটিবসন্ত এবং চিকেনপক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ উপকারী ভুমিকা পালন করে থাকে।

বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিগুলি হেপাটাইটিস বি এবং হারপিসের মতো ভাইরাল রোগের চিকিৎসায় নিম পাতা ব্যবহার করে আসছে। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে নিম পাতার উপকারিতা পেতে খালি পেটে এর রসও পান করতে পারেন। আশা করি যথেষ্ট উপকৃত হবেন৷

দাঁতের চিকিৎসায় ভুমিকা রাখে:

কেউ যদি, নিম পাতা খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায়” এমন প্রশ্ন করে থাকে তবে সবার আগে যে ব্যাপারটি মাথায় আসা উচিত সেটি হলো “দাঁতের চিকিৎসা”! দাঁতের ক্ষেত্রে নিম পাতার উপকারিতা মোটেও অগ্রাহ্য করবার মতো নই।

লক্ষ্য করলেই দেখবেন, বেশ অনেক বছর আগেই হয়তো আপনি আপনার দাদা-দাদি বা বাবা-মাকে দাঁত ব্রাশ করার পরিবর্তে নিমের ডাল ব্যবহার করতে দেখেছেন! এর পেছনের কারণটা কি আপনার জানা আছে? মূলত নিম গাছের বেশ কিছু উপকারিতার লোভে পড়েই সে যুগের মানুষেরা নিম পাতা বা নিম গেছের ঢালের সাহায্যে দাঁত ব্রাশ করতেন৷

মজার ব্যাপার হলো জার্নাল অফ ফার্মেসি অ্যান্ড টেকনোলজি অনুসারে, নিম পাতায় দাঁতের ব্যাথা উপশম করবার মতো যথেষ্ট প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। এছাড়াও গবেষণা বলছে, নিম পাতার অ্যান্টিসেপটিক ফিচার মুখের আলসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:

নিম পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। এ-কারণে বলা হয়ে থাকে নিম পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও বেশ উপকারী। কেননা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে উপকারী উপদানগুলির প্রায় প্রতিটিই উপাদানই রয়েছে এই নিম পাতায়।

একটি গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী টাইপ 2 ডায়াবেটিস মেলিটাস নিয়ন্ত্রণের প্রায় পুরো সক্ষমতাই রয়েছে নিম গাছের পাতায়। নিম পাতা শরীরে ইনসুলিন সংকেতকারী অণুগুলিকে বাড়িয়ে তোলার কারণে সাধারণত এমনটা ঘটে থাকে। এছাড়াও নিম পাতা শরীরে গ্লুকোজের ব্যবহারকেও সঠিকভাবে পরিচালিত হতে সাহায্য করে।

নিম পাতায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্যে উপকারী ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্যানিন, স্যাপোনিন এবং অ্যালকালয়েডের মতো বিভিন্ন বায়োঅ্যাকটিভ রয়েছে। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল রিসার্চ এর মতে, নিম পাতার নির্যাসে হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব রয়েছে। যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি নিম পাতায় উপস্থিত নিম্বিডিন যৌগ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতেও যথেষ্ট সময় নিয়ে থাকে।

চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা:

আমাদের আজকের এই “নিম পাতা খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায়” রিলেটেড আর্টিকেলের যেসব রিডার চুলের সমস্যায় আছেন তারা নিম পাতার সাহায্য নিতে পারেন। ন্যাচারাল সলুশন হিসেবে নিম পাতার ব্যবহার হতে পারে পারফেক্ট সমাধান।

আপনি কি জানেন, চুল থেকে উকুন দূর করতে নিমের তেল বেশ উপকারী ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে? এছাড়াও এই তেল খুশকি কমাতে সাহায্য করে থাকে৷ এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো নিম পাতায় এক ধরণের অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা খুশকি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি মাথার স্বাস্থ্যবান ত্বক নিশ্চিত করে। একটি নির্ভরযোগ্য গবেষণা অনুসারে, নিম পাতা অ্যালোপেসিয়া বা চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী ভুমিকা পালন করে থাকে।

ওপেন ডার্মাটোলজি জার্নাল অনুসারে, নিম পাতার ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি চুলের স্ক্যাল্প ক্লিনজার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। পাশাপাশি দ্রুত চুলের বৃদ্ধিও নিশ্চিত করে। যারা মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তারা নিম পাতা বেটে বা পেস্ট করে তা ব্যবহার করতে পারেন।

নিম পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়:

ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিয়মিত ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার করে যেতে পারেন তবে খুব ভালো ফলাফল পাবেন। “নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা” এই প্রশ্নের আরো একটি যুতসই উত্তর হলো নিম পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়। আপনার যদি ব্রণের সমস্যা থাকে এবং তা কোনোভাবেই সমাধান করা না যায় তবে সেক্ষেত্রে আপনি ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

ব্রণ ব্রেকআউট কমাতে আপনি চাইলে নিম পাতা পেস্ট করে কিংবা রস রেডি করে খালি পেটে খেয়ে নিতে পারেন। আবার যদি খেতে ইচ্ছে না করে তাহলে তার পরিবর্তে তা পেস্ট করে নিয়মিত মুখে এপ্লাই করতে পারেন।

ফার্মাসিউটিক্যাল, বায়োলজিক্যাল এবং কেমিক্যাল সায়েন্সের জার্নাল অনুসারে, যেকোনো ভেষজ অ্যান্টি-ব্রণ জেল কিংবা নিম পাতার অ্যাহাইড্রো-অ্যালকোহলিক নির্যাসকে ব্রণের অনেক বড় শত্রু মনে করা হয়। বিশেষ করে নিম পাতায় থাকা নিমবিডিন নামক উপাদানটি ব্রণের কারণে ত্বকে সৃষ্ট জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে৷

এছাড়াও আরো উপায় আছে নিম পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার। আপনি যদি নিম পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন

ওজন কমাতে সাহায্য করে:

নিম পাতা কিন্তু ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে৷ এটি যেহেতু একটি ন্যাচারাল টিপস সেহেতু ওজন কমাতে গিয়ে বাড়তি কোনো সমস্যাতেও পড়ার সুযোগ থাকে না। সকালে খালি পেটে নিম পাতা খেতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের মাঝে একটি বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

শুধু তাই নয়, নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ফিচার থাকায় এটি পাকস্থলীর ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। গবেষণা বলছে হজমশক্তির উন্নতি ঘটানোর ক্ষেত্রেও নিম পাতার গুরুত্ব দেখার মতো। কেননা নিম পাতায় থাকা শীতল ভাব হজমশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। আর যদি হজমশক্তির উন্নতি ঘটানো যায় তবে খুব অল্প সময়ে ওজন কমিয়ে আনাটা সম্ভব হবে।

এছাড়াও নিমের ছালের নির্যাস দেহের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অংশে আলসারের চিকিৎসায় সাহায্য করে। সুতরাং সকালে নিম পাতা খেলে তা গ্যাস এবং অ্যাসিডিটির মতো হজমের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে। বিভিন্ন কার্যকরী ব্যায়ামের পাশাপাশি এই নিম পাতা সকালে খালি পেটে খেতে পারলে আশা করি ফিট থাকাটাকে কঠিন কোনো ব্যাপারই মনে হবে না।

নিম পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। নিম পাতার উপকারিতা যেমন আছে তেমনি যদি এটি অতিরিক্ত বা ভুল ভাবে ব্যাবহার করা হয়ে যাই তবে নিম পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। একজন ব্যক্তি এক টানা কতদিন কয়টি নিম পাতা গ্রহণ করতে পারবে সেটা একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। নিম পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বেশি তীব্র নয় তবুও সতর্কতা থাকা প্রয়োজন।

  • খালি পেটে নিম পাতার রস বা বড়ি বেশি দিন খাওয়া উচিৎ নয়। হিতে বিপরীত হতে পারে।
  • নিম পাতার পাউডার বা নিম পাতার পেস্ট খাবার পরে যদি মাথাব্যথার, বমি বমি ভাব, ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা হয় তবে সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। খুব বেশি সমস্যা দেখা দিলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
  • একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য নিম পাতা মোটেও উপযোগী নয়। কারণ এটি হয়ে উঠতে পারে গর্ভপাতের কারণ।
  • নিম্নরক্তচাপের সমস্যা থাকলে নিম পাতা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
  • এক দিনে আপনি সর্বোচ্চ দুটি নিম পাতা খেতে পারেন। বেশি খেলে আপনার উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হবে।

ইতি কথা

আশা করি নিম পাতা খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায় এবং নিম পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ইতিমধ্যেই সঠিক ধারণা পেয়ে গেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো নিম গাছ বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে কিন্তু বাড়তি কোনো যত্নেরও প্রয়োজন পড়ে না। সুতরাং আশেপাশে একটা বা দুইটা চারা গাছ লাগিয়ে অপেক্ষা করলেই এর উপকার ভোগ করতে পারবেন আপনিও! আসুন….প্রকৃতির সাহায্যে নিজেদের সুস্থ রাখি, কৃত্রিমতাকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেওয়া কমিয়ে দিই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *