মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি প্রায় সবাই জানি। আমরা জানি চিনি ও মিষ্টি আমাদের শরীরের জন্য খারাপ কিন্তু শুধুই যে খারাপ তা নয়। কিছু ভালো দিক ও আছে যা আমাদের শরীরের সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন। আজ আমরা এই নিবন্ধে আলোচনা করবো যে চিনি ও মিষ্টি কতটা খারাপ মানব দেহের জন্য এবং কতটুকু ভালো।

চিনি খাওয়ার উপকারিতা

স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য চিনি খাওয়ার উপকারিতা আছে। আমরা যখন কঠোর পরিশ্রম করি তখন আমাদের শরীর থাকে অনেক শক্তি ক্ষয় হয় এবং আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তখন সেই শক্তির ঘাটতি পূরণ করার জন্য চিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কঠোর পরিশ্রমে মাঝে মাঝে যদি অল্প অল্প পরিমান চিনির দলা অথবা চকোলেট খাওয়া হয় তবে তা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায় এবং মাংসপেশীর শক্তি উৎপন্ন করতে সাহায্য করে।

মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চিনি শরীরের জন্য কতটা উপকারী

চিনির খাওয়ার মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারিতা যেমন:

  • ত্বকের টোন ঠিক রাখে
  • নিম্ন রক্তচাপকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে
  • দ্রুত শক্তি যোগায়
  • বিষণ্ণতা দূর করে
  • কাটাছেঁড়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে

আমাদের দেশে কত প্রকারের চিনি পাওয়ায়?

আমাদের দেশে সাধারণত অনেক ধরনের চিনি পাওয়া যাই তবে সাধারণত চিনিকে ১১ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

  1. দানাদার চিনি
  2. ডিমেরারা সুগার
  3. সাসটার সুগার
  4. টারবিনেডো সুগার
  5. মাসকোভাডো সুগার
  6. কনফেকশনারস সুগার
  7. পার্ল সুগার
  8. লাইট ব্রাউন সুগার
  9. স্যানডিং সুগার
  10. ডার্ক ব্রাউন সুগার
  11. কেইর (আখ) সুগার

চিনি খাওয়ার অপকারিতা

চিনি খাওয়ার যেমন উপকারিতা তেমনি আছে চিনি খাওয়ার অপকারিতা। গত কয়েক দশক ধরে ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীরা এত পরিমান সতর্কবার্তা দিয়েছে যে এখন জনস্বাস্থের জন্য চিনি এক নাম্বার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ চিনি অতিরিক্ত সেবনের করলে মানব শরীরে প্রচুর পরিমান ক্ষতি করে।

মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চিনি খাওয়ার অপকারিতা কী

যাদের বেশী মিষ্টি খেতে পছন্দ তাদের বিষয়ে প্রায়ই শোনা যাই তারা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস টাইপ-টু অথবা ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়েছে। কিন্তু এটাও সত্য যে স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য সবসময় শর্করাই দায়ী থাকেনা। সাদা চিনি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লাল চিনি আমাদের শরীরের জন্য ভালো যেটা সরাসরি আখ থেকে উৎপাদিত হয়।

চিনি মানব দেহে যে পরিমান ক্ষতি করে:

  • লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়
  • ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়
  • স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে
  • চিনি ওজন বাড়িয়ে দেয়
  • ওবেসিটি হতে পারে
  • ডায়াবেটিস হতে পারে
  • লিভারের নানা অসুখ হতে পারে
  • হৃদযন্ত্র ও কিডনির নানা সমস্যা দেখা
  • বয়সের তুলনায় দ্রুত বার্ধক্য আসবে
  • ক্ষুধা কমে না
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে
  • রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে
  • ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • এইডস জাতীয় ঘাতক ব্যাধিগুলো হতে পারে

মিষ্টি মানব দেহের জন্য কতটা উপকারী?

আমাদের স্বাস্থ্যর ওপর মিষ্টি কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে কিনা তা যাচাই করতে গিয়ে অনেক বিজ্ঞানীরা বা ডাক্তার বলেছেন, এটা প্রমান করা খুব কঠিন যে শুধু মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের স্বাস্থ্য জন্য ঝুঁকিতে ফেলে। মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে নানা প্রকার কথা প্রচলিত রয়েছে। আজ আমরা মিষ্টি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা জানার চেষ্টা করবো।

মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মানব দেহের জন্য মিষ্টি কতটা উপকারী

আমাদের দেশে কত ধরণের মিষ্টি পাওয়া যায়?

দুধ, চিনি, ময়দা, ছানা ও আটার সমন্বয়ে তৈরি করা হয় জনপ্রিয় পুষ্টিকর মিষ্টি খাবার। আমাদের দেশের কয়েক প্রকারের মিষ্টি অনেক সুপরিচিত যেমন: রসগোল্লা, কালোজাম, রাজভোগ, রসমালাই, চমচম, প্রাণহরা, ছানামুখী, মণ্ডা, বুরিদান, সন্দেশ, মতিচুর লাড্ডু, আমৃতি বা আমিট্টি , কাঁচাগোল্লা এবং মালাইকারী ইত্যাদি।

মিষ্টির খাওয়ার উপকারিতা:

মিষ্টি আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। দুধ ও ছানা ব্যবহৃত ১০০ গ্রাম রসগোল্লা মিষ্টিতে প্রায় ১৮৬ ক্যালরী পাওয়ায় যা প্রায় ১৫৩ ক্যালরীই আসে শর্করা হতে। এটি তাৎক্ষণিক ভাবে আমাদের শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। আমরা যখন ঝাল বা তেল মশলা যুক্ত খাবার খাই তখন আমাদের পাকস্থলীতে অ্যাসিড ক্ষরণ শুরু হয়। মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে এই অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা কী

ভাজা পোড়া বেশি খেলে শরীরের রক্তচাপ অনেকাংশেই কমে যায়, তখন মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাই। এতে আমাদের শরীরে শান্তি অনুভব করি।

অনেক ডাক্তার গবেষণা করে দেখেছেন বয়স্ক মানুষদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে শর্করা গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে আসে। দুর্বলতা এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যদি সকালে নাস্তার সাথে মিষ্টি খাওয়া হয় তবে সারাদিন কম খাদ্য গ্রহণ এবং শর্করা ক্রেভিং কমে যার ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রে মিষ্টি গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মিষ্টিতে কি কি পুষ্টি উপাদান থাকে:

মিষ্টি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় দুধ এবং ছানা। যাতে রয়েছে প্রোটিন,ফ্যাট, ক্যালসিয়াম এবং বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় উপাদান। মিষ্টি তৈরিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি ব্যবহৃত হয় এই কারণে ক্যালরীর বেশি অংশ আসে শর্করা হতে।

মিষ্টি মানব দেহের জন্য কতটা খারাপ?

আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে যাবে যদি অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া হয়। তাই শরীরের ওজন বাড়ানো থেকে বাঁচতে হলে অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার ছাড়তে হবে। এর সাথে অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবারও ছাড়তে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনি শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তবে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সীমিত পরিমান খাওয়া যেতে পারে।

মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মিষ্টি মানব দেহের জন্য কতটা ক্ষতিকর

মিষ্টি জাতীয় খাবারে অনেক ক্যালরি থাকে। যে কোনো উপায়ে আপনি যদি আপনার শরীরে ক্যালরির পরিমান বৃদ্ধি করান তবে ওজন বাড়তে দিতেই হবে আর এটাই স্বাভাবিক।

মিষ্টি খাওয়ার অপকারিতা:

এটা আমাদের আগে জানা প্রয়োজন যে আমাদের প্রতিদিনের খাবারের চাহিদা মেটাতে কতটুকু পরিমান মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রয়োজন। মিষ্টি জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার কোন দরকার নাই। কারণ আপনার শরীরে যতটুকু মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রয়োজন ততটুকু গ্রহণ করতে হবে কারণ মিষ্টি জাতীয় খাবারের সুবিধাও আছে আবার অসুবিধাও আছে।

মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মিষ্টি খাওয়ার অপকারিতা কী

মিষ্টি খাওয়ার অপকারিতা গুলো হলো:

  • শরীরে বাড়তি মেদ জমে ভুঁড়ি বেড়ে যেতে পারে
  • উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে
  • শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে
  • কোলেস্টেরলের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে
  • স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে
  • হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে
  • ধমনীর ভেতর ট্রাইগ্লিসারাইডজাতীয় চর্বি জমাতে সাহায্য করে
  • হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে
  • স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে
  • মস্তিষ্কের গড় আয়তনও কম যেতে পারে
  • ক্যান্সার এর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে

প্রতিদিন কতটুকু চিনি খাওয়া যাবে:

প্রতিদিন কতটুকু চিনি খাবেন? আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে তারা জানিয়েছে যে সারা বিশ্বের মানুষ গড়ে প্রায় প্রতিদিন ২২ চামচ করে চিনি খাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( World Health Organization) এর তথ্য মতে প্রতিদিন ৬ চামচ (২৫ গ্রাম) এর বেশি চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য।

মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রতিদিন কতটুকু চিনি খাবেন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে যে যদি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হয় তবে প্রতিদিন সর্বাধিক ৯ চামচ (৩৭.৫ গ্রাম) আর যদি নারী হয় তবে সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন সর্বাধিক ৬ চামচ (২৫ গ্রাম) চিনি খাওয়া যেতে পারে।

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক বড়ো ঝুঁকি হতে পারে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতার মতো অসংক্রামক রোগব্যাধি আমাদের শরীরে বাসা বাধতে পারে। শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা অনেকটা বেড়ে যায়, যার ফলে শরীরে রক্তচাপের সৃষ্টি হয়। এমনকি এটি আপনার জন্য স্ট্রোকের কারণ হত পারে।

যেসব মিষ্টি খাবার খেলে ওজন বাড়বে না

মিষ্টির কথা শুনলেই মনে করি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু কিছু মিষ্টি আপনার এই ভুল ধারণা পাল্টে দিবে। মিষ্টি যে শুধু অস্বাস্থ্যকর নয় এতে কিছু উপকারও আছে সেটা প্রমান করে দিবে এমন কিছু মিষ্টির নাম আমরা এখানে তুলে ধরবো।

  • কোকোয়া
  • আপেল ও বাদাম
  • ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ পিনাট বাটার
  • বেরিজাতীয় ফল
  • আঁশসমৃদ্ধ বাদাম
  • হুইপড ক্রিম
  • পুষ্টিকর খেজুর
  • ডার্ক চকলেট
  • আঁশসমৃদ্ধ আইসক্রিম ও বিস্কুট
  • প্রোটিন কেক

পরামর্শ:

যাদের শরীরে ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ এই ধরণের রোগ আছে তাদের সম্পূর্ণ ভাবে মিষ্টি -চিনি অথবা যুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত। তবে ডায়বেটিস রোগীদের যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন পরিমান মতো মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে। রক্তচাপ কমে গেলেও হালকা মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে। তবে যারা প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করে তাদের শরীরের ক্ষয়ে যাওয়া শক্তি পূরণের জন্য মিষ্টি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার:

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে চিনি ও মিষ্টি শুধু আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করেনা কিছু উপকারও করে। যাইহোক আমরা মিষ্টি ও চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে এই প্রবন্ধ থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। প্রতিদিন চিনি কতটুকু খাওয়া যাবে এটাও জানলাম। আপনার যদি আরো কিছু জানার থাকে তবে কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ এতক্ষন আমাদের সাথে থাকে জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *