হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন কী

হার্ট অ্যাটাক একটি ঘাতক রোগ। আপনাকে অবশ্যই জেনে রাখা উচিত যে হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন কী। কারণ যে কোন সময়ে যে কোন জায়গায় আপনি স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে পারেন। আপনি যদি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষন গুলো জেনে রাখেন তবে খুব সহজে এই রোগ মোকাবেলা করতে পারবেন।

তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন গুলো কী কী, এই ঘাতক রোগটি কাদের হবার সম্ভাবনা বেশি এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয় কী?।

হার্ট অ্যাটাক কী?

হার্ট অ্যাটাক কী এবং হার্ট অ্যাটাক কোনো হয়? – এটি আমাদের সকলের জেনে রাখা অত্যান্ত জরুরি। কারণ হার্ট অ্যাটাক রোগ এটি একটি মারাত্মক রোগ, বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ হার্ট অ্যাটাক এর কারণে অকালে মৃত্যু বরন করছে। সময় মতো যদি সঠিক চিকিৎসা না করা যাই তবে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অনিবার্য।

হার্ট অ্যাটাক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। একটি হার্ট অ্যাটাক সাধারণত ঘটে যখন একটি রক্ত ​​​​জমাট বাঁধা হার্টে রক্ত ​​​​প্রবাহকে বাধা দেয়। রক্ত ছাড়া, টিস্যু অক্সিজেন হারায় এবং মারা যায়।

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন কী
হার্ট অ্যাটাক কী – হার্ট অ্যাটাক কিভাবে হয়?

হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?

হার্ট অ্যাটাক কিভাবে হয়? করোনারি আর্টারি বা ধমনী আমাদের হার্টের উপরিভাগে লেপ্টে থাকে এটির মাধ্যমে হার্ট অক্সিজেন এবং পুষ্টি গ্রহণ করে। করোনারি ধমনীতে যখন চর্বি জমতে জমতে থাকে, তখন রক্ত জমাট বাঁধা শুরু হয় এবং একটা সময় রক্তনালীর রক্ত চলাচল করা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর মাংসপেশিটুকুতে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাই হার্ট যে অংশটুকু পুষ্টি এবং অক্সিজেন পেত।

একে চিকিৎসা বৈজ্ঞানিকের পরিভাষায় ইংরেজিতে বলে “মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন” এবং বাংলায় প্রচলিত ভাষায় বলে “হার্ট অ্যাট্যাক – (Heart Attack)।

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন কী?

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা এবং ঘাম হওয়া। হার্ট অ্যাটাকের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে চিকিৎসা করা দরকার। আপনার হৃৎপিণ্ডে রক্তের সরবরাহ পুনরুদ্ধার করার জন্য ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ হ’ল রক্তনালীগুলি যা হার্টকে ব্লক করে দেয়।

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন কী
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কি – হার্ট অ্যাটাক হলে কি করনীয়?

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে:

  • বুকের চাপ দিয়ে ব্যাথা
  • দুই বাহু, চোয়াল, ঘাড়, পিঠ এবং পেঠে ব্যথা
  • মাথা হালকা লাগে, ঝিম ঝিম করে
  • ঘাম হয়
  • পুরোপুরি নিশ্বাস নেয়া যায় না
  • কাশি হয়
  • বমি বমি ভাব হয়
  • অস্থির বা আতঙ্কিত লাগে

বুকে ব্যথার তীব্রতা হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে কিনা নির্ধারণ না করে, হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ বুঝে কোনো ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক আক্রান্ত হচ্ছে কিনা তা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে বুকে তীব্র ব্যথা সবারই হয় না হার্ট অ্যাটাক হলে। এটা নারীর ক্ষেত্রেই বিশেষ করে একটু বেশি হয়।

  1. ব্যথার এলাকা: কাঁধের ব্লেড, বাহু, বুক, চোয়াল, বাম হাত বা উপরের পেটের মধ্যবর্তী এলাকায়
  2. পুরো শরীর: মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, হালকা মাথাব্যথা, আঠালো ত্বক, ঠান্ডা ঘাম, বা ঘাম
  3. ব্যথার ধরন: বুকে শক্ত মুঠির মতো হতে পারে
  4. ঘাড়: অস্বস্তি বা নিবিড়তা
  5. ব্যথা পরিস্থিতি: বিশ্রামের সময় ঘটতে পারে
  6. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল: অম্বল, বদহজম, বমি বমি ভাব, বা বমি
  7. বাহু: অস্বস্তি বা নিবিড়তা
  8. এছাড়াও সাধারণ: উদ্বেগ, বুকে চাপ, আসন্ন ধ্বংসের অনুভূতি, ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, বা কাঁধে অস্বস্তি

হার্ট অ্যাটাক কাদের হতে পারে?

যাদের ভিতরে নিচের উল্লেখিত লক্ষণ গুলো পাওয়া যাবে বুঝতে হবে তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সসম্ভাবনা আছে।

  • ডায়াবেটিস, উচ্ছ রক্তচাপ, হাইপার লিপিডেমিয়া থাকলে
  • বংশে কারও হার্ট অ্যাটাক হলে
  • ধুমপান,মদ্যপানের অভ্যাস
  • স্থুলতা বা মুটিয়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ
  • মাদকাসক্তি
  • মধুমেহ রোগ
  • মদ ও ধূমপান
  • অতিরিক্ত উচ্চ রক্তচাপ
  • দীর্ঘ সময় ধরে ভুল খাদ্যাভ্যাস
  • হাই কোলেস্টেরল লেভেল
  • শারীরিক সক্রিয়তার অভাব
হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন কী
হার্ট অ্যাটাক কি কারণে হয়

হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ কী?

উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা, ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস সহ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জন্য অনেক ঝুঁকির কারণ রয়েছে। আপনার যদি এই ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে কোনটি থাকে এবং বুকে ব্যথা বা হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য সতর্কতা লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারকে দেখুন।

হার্ট অ্যাটাক হল সবচেয়ে মারাত্মক ধরনের কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে মৃত্যু হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের অনেকগুলি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে প্লেক তৈরি করা; উচ্চ্ রক্তচাপ; স্থূলতা এবং ধূমপান।

আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে 50 বছরের বেশি বয়সী হওয়া, ডায়াবেটিস থাকা, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধা। প্রতিটি ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাকের সঠিক কারণ অস্পষ্ট, তবে কিছু সাধারণ ঝুঁকির কারণ রয়েছে যা এই গুরুতর অবস্থার বিকাশের সম্ভাবনা কমাতে পরিবর্তন বা এড়ানো যেতে পারে।

আরো পড়ুন:

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?

সাধারণত হৃদপিন্ড পাম্প করে আমাদের সারা শরীরে রক্ত ছড়িয়ে দেয়। তাই আমরা সুস্থ থাকি। কিন্তু যখনি হৃদপিন্ড আমাদের সারা শরীরে রক্ত পাম্প করে ছড়িয়ে দিতে পারবেনা তখনি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হবে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এর প্রধান লক্ষণ হলো: ঠাণ্ডা ও ফ্যাকাসে ত্বক, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, হঠাৎ পড়ে যাওয়া, নাড়ির স্পন্দন অনুভূত না হওয়া, তৎক্ষণাৎ সংজ্ঞা হারানো।

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন কী
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণ কী – কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কেন হয়?

যখন কারও হার্ট অ্যাটাক হয়, তখন তার হৃদপিণ্ডের পেশী খুব দুর্বল হয়ে যায়, যার কারণে হৃদপিন্ড রক্ত পাম্প করতে পারে না। হৃৎপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হলে এটি স্পন্দন বন্ধ করে দিতে পারে। হৃদযন্ত্র হঠাৎ করে তার স্বভাবগত কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া অথবা হৃদপিন্ড রক্ত সমস্ত শরীরে পাম্প করা বন্ধ করে দেওয়াকেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলা হয়।

হার্ট অ্যাটাক সহ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ হতে পারে এমন অনেক কিছু আছে, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল করোনারি ধমনী রোগ বা বর্ধিত হার্ট বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অন্যান্য অবস্থার কারণে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং হার্ট অ্যাটাককে দুইটার মানে কিন্তু একনা। দুইটা দুইরকম অর্থ দাঁড়ায়।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয় কী?

প্রথমে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কি এটা জানতে হবে তারপর হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার জন্য অনেক মানুষ অনেক কিছু করতে পারে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা নিশ্চিত করা। এর মানে হল সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে চলা। হৃদরোগের স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত স্ক্রীনিং করা এবং আপনি যে কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আগ্রহী সে সম্পর্কে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলাও গুরুত্বপূর্ণ।

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন কী
কি খেলে হার্টের রোগ ভালো হয় – হার্ট অ্যাটাক হলে প্রতিরোধে করণীয় কী

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয় হিসাবে এগুলো এড়িয়ে চলতে চলতে হবে:

  • চর্বি ও চর্বিযুক্ত মাংস
  • চিজ
  • ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার
  • সসেজ
  • কেক ও বিস্কুট
  • ডালডা, ঘি ও মাখন
  • পেস্ট্রি ও পিৎজা
  • ক্রিম বা ননী
  • পাম তেল এবং নারকেল তেল দিয়ে তৈরি করা খাবার

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয় হিসাবে এগুলো মেনে চলতে হবে:

  • অবশ্যই ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে
  • রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
  • মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলতে হবে
  • স্বাস্থ্যকর-খাদ্য এবং সুষম ডায়েট মেনে চলতে হবে
  • জীবনযাপনের ধরন অবশ্যই পাল্টাতে হবে
  • বিভিন্ন দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে
  • রাত জাগার অভ্যাসটা বন্ধ করতে হবে
  • বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে
  • সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করুন
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলতে হবে
  • লবণ খাবার পরিমান কমাতে হবে
  • ওজন নিয়ন্ত্রন রাখতে হবে
  • ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
  • প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে
  • কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
  • মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করে যেতে হবে – ইত্যাদি।

উপসংহার:

আশা করছি আপনি এখন এই সম্বন্ধে পরোপুরি বুঝতে পেরেছেন যে হার্ট অ্যাটাক কিভাবে হয়, হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন কী এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয় কী। আপনার যদি আরো কিছু জানার থাকে তবে অবশ্যই আমাকে জানাবেন। নিবন্ধটি পড়ে আপনাকে কেমন লাগলো এবং কোন বিষয় টা নতুন শিখলেন সেটা কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেননা। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You May Also Like

অতিরিক্ত ঘুম কি কোনো রোগের কারণ হতে পারে? – অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ

হুট করেই ক’দিন ধরে অতিরিক্ত ঘুম আসছে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো…

শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট এবং বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষন কী

বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এবং শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট এটা…