আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন লেবু খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। অনেকে আছে ওজন কমাতে প্রতিদিন সকালে পাকা লেবুর রসের সাথে হালকা গরম পানি মিশিয়ে খাই। তবে শুধু ওজনই কমাতে লেবুর ভূমিকা শেষ না। আজ আমরা আলোচনা করবো লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।
এই নিবন্ধে আরও থাকছে, বাতাবি লেবু খাওয়ার উপকারিতা, কমলা লেবু খাওয়ার উপকারিতা, পাতি লেবু খাওয়ার উপকারিতা, মুসাম্বি লেবু খাওয়ার উপকারিতা। তবে চলুন শুরু করা যাক …..
সুচিপত্র
লেবু কী?
লেবু হলো চিরসবুজ সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি প্রজাতি। এই ফলটি কাঁচাই সবুজ এবং পাকলে হলুদ রঙের দেখায়। আমাদের দেশে লেবু বিভিন্ন ভাবে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। রান্নার কাজে ব্যবহৃত ছাড়াও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে কাঁচা লেবু ব্যবহৃত হয়। মূলত এই ফলটি রসের জন্য জনপ্রিয়। লেবুর রস রান্না ও রান্নার জিনিস পত্র পরিষ্কারের উভয় কাজেই ব্যবহার করা যায়।
লেবুর রস একটু টক স্বাদযুক্ত হয় কারণ লেবুর রসে প্রায় ২.২ পিএইচ এর প্রায় ৫% থেকে ৬% সাইট্রিক অ্যাসিড। লেবুর শরবত, পানীয় এবং খাবারের মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয় লেবুর রস টক স্বাদযুক্ত হওয়ায়।
লেবুর রস কেন খাবেন?
লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি,ফাইবার এবং শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষমতা বাড়ার জন্য ব্যাপক সাহায্য করে। লেবু হার্টের স্বাস্থ্য,শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং হজমের শক্তি বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে নানান ভাবে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় যেমন, ক্যান্সার, হৃদরোগ, চোখে ছানি পড়া ইত্যাদি। লেবুর রস এই সমস্ত রোগের আশঙ্কা অনেক কমায়। এছাড়াও সর্দি এবং জ্বরের চিকিৎসাতেও এই লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
খালি পেটে লেবু খেলে কি হয়?
আপনি যখন ঘুম থেকে উঠবেন, উঠার পরে কোনো কিছু খাবার আগে খালি পেটে হালকা কুসুম কুসুম মতো গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিন। যদি শুধু লেবুর রস গরম পানি দিয়ে খেতে খারাপ লাগে তবে এর সাথে সামান্য মধু ও লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাতিলেবুর রসে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড এবং প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম। যারা রক্তচাপ রোগে যারা বহু দিন ধরে ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকাল-বিকাল লেবুর পানি খেতে পারেন।
যাদের ত্বকের সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন সকালে লেবুর পানি খেতে পারেন। কারণ লেবু পানিতে ভিটামিন সি পাওয়ায় যা কোলাজেন ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে. যাদের লিভারের এবং হজমের সমস্যা আছে তারাও প্রতিদিন সকালে লেবুর পানি খেতে পারেন। এমনকিপ্রতিদিন সকালে লেবুর পানি পান করলে মুখে দুর্গন্ধও হয় না.
খালি পেটে লেবু খাবার উপকারিতা:
- লিভার পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ রাখে
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানেও দারুণ কাজ করে
- কিডনির পাথর থেকে মুক্তি পেতে পারেন
- রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে
- কোলাজেন ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে
- মুখের দুর্গন্ধ হতে দেয় না
- হজমশক্তি বাড়ানো ভূমিকা পালন করে
লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
লেবু আমাদের কাজে অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল। ফলটি দাম অন্য ফলের তুলনায় অনেক কম। আমাদের শরীরের ছোট থেকে বড়ো অনেক ধরণের রোগ থাকে মুক্তি পেতে আমরা লেবুর রস খেয়ে থাকি। আমাদের দেশে লেবু খাওয়ার উপকারিতা কী প্রায় সবাই কম বেশি এটা জানে। তার পরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অজানা থেকে যায়।
আমরা লেবুর সেরা ২২ উপকারিতা খুঁজে পেয়েছি। আজ আমরা লেবু খাওয়ার অজানা উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
লেবু খাওয়ার সেরা ২২ টি উপকারিতা:
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- সংক্রমণের প্রকোপ কমে
- পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে
- নিশ্বাসে সজীবতা আনে
- উচ্চ রক্তচাপ কমায়
- ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারী
- ক্ষত সারায়
- স্ট্রেস এবং ক্লান্তি থেকে মুক্তি মেলে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- লিভারের কার্যক্রম সচল রাখে
- ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে
- কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে
- গ্যাস্ট্রিক সারাতে
- টিবি রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
- শরীর হাইড্রেট রাখবে
- নখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে
- পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়
- ওজন কমাতে
- শ্বাস-প্রশ্বাস ভালো রাখে
- পিএইচ (PH) ব্যালেন্স ঠিক রাখতে
- হজম শক্তি বাড়ায়
লেবুতে কী কী পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়?
লেবু আমাদের স্বাস্থ্যের পুষ্টি জন্য খুব উপকারী একটা ফল। এই ফলে প্রচুর পরিমানে শরীরের জন্য উপকারী উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম লেবু থেকে প্রায় ভিটামিন সি ৬৩ মিলিগ্রাম পাওয়ায়। এছাড়াও ভিটামিন এ পাওয়ায় ১৫ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম পাওয়ায় ৯০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি পাওয়ায় ০.১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম এবং লৌহ পাওয়ায় ০.৩ মিলিগ্রাম।
লেবুর পুষ্টি উপাদান সমূহ:
- শর্করা
- চিনি
- খাদ্য আঁশ
- স্নেহ পদার্থ
- প্রোটিন
- থায়ামিন (বি১)
- রিবোফ্লাভিন (বি২)
- নায়াসিন (বি৩)
- প্যানটোথেনিক
- অ্যাসিড (বি৫
- ভিটামিন বি৬
- ফোলেট (বি৯)
- কোলিন
- ভিটামিন সি
- ক্যালসিয়াম
- লৌহ
- ম্যাগনেসিয়াম
- ম্যাঙ্গানিজ
- ফসফরাস
- পটাসিয়াম
- জিংক
শিশুর দাঁত, মাড়ি ও পেশী মজবুত রাখতে লেবুর গুরুত্ব অপরিসীম। অরুচি ভাব হলে লেবু খেতে পারেন আপনার রুচি আবার ফিরে আসবে।
বাতাবি লেবু খাওয়ার উপকারিতা
বাতাবি লেবু টক মিষ্টি স্বাদ জাতীয় ফল। এটি ছোট বড় সবার একটি প্রিয় ফল। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। অনেকে বাতাবি লেবুকে জাম্বুরাও বলে থাকেন। যখন কাঁচা থাকে তখন এই ফলের বাইরের দিকটা সবুজ দেখায় এবং যখন পেকে যাই তখন হালকা সবুজ বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে।
বাতাবি লেবু শরীরের ওজন কমাতে ও লিভার সুরক্ষায় সহায়তা করে। দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায়ও বাতাবি লেবু অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তে ভিতরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনতে এবং হূদরোগ জনিত যত প্রকার রোগ আছে সমস্ত রোগের জটিলতা শরীরকে নিরাপদ রাখে।
বাতাবি লেবুর পুষ্টি গুনাগুন সমূহ:
ওজন কমাতে সহায়তা করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, হৃদরোগে উপকারী, রক্ত পরিষ্কারক, হজম সমস্যায় কার্যকরী, দাঁত ও মাড়ির রোগে, ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম বাতাবি লেবুতে যে পরিমান পুষ্টিগুণ রয়েছে তা হলো:
- খাদ্যশক্তি ৩৮ কিলোক্যালরি
- সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন ০.৫ গ্রাম
- পটাশিয়াম ২১৬ মিলিগ্রাম
- স্নেহ ০.৩ গ্রাম
- ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম
- শর্করা ৮.৫ গ্রাম
- ম্যাংগানিজ ০.০১৭ মিলিগ্রাম
- খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম
- থায়ামিন ০.০৩৪ মিলি গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৩৭ মিলি গ্রাম
- খনিজ লবণ ০.২০ গ্রাম
- আয়রন ০.২ মিলি গ্রাম
- রিবোফ্লেভিন ০.০২৭ মিলি গ্রাম
- ক্যারোটিন ১২০ মাইক্রো গ্রাম
- নিয়াসিন ০.২২ মিলি গ্রাম
- ভিটামিন বি২ ০.০৪ মিলি গ্রাম
- ভিটামিন বি৬ ০.০৩৬ মিলি গ্রাম
- ভিটামিন সি ১০৫ মিলি গ্রাম
কমলা লেবু খাওয়ার উপকারিতা
আমি যখন বড় হচ্ছিলাম, আমার মায়ের ফ্রিজে সবসময় লেবুর জলের জার থাকত। তিনি প্রায়ই গরমের দিনে পান করার জন্য কমলা লেবুর জলের একটি ব্যাচ তৈরি করতেন। সামান্য টক লেবুর সাথে মিশ্রিত মিষ্টি সাইট্রাসের স্বাদ এমন কিছু যা আমি আজও পছন্দ করি। কমলা লেমনেড একটি রিফ্রেশিং পানীয় যা বছরের যেকোনো সময় উপভোগ করা যায়।
কমলা ও লেবু একসাথে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি ডায়েটারি ফাইবারের একটি ভাল উত্স, যা হজম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও, এগুলিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। নিয়মিত সাইট্রাস কমলা লেবু খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সাইট্রাস ফল মুদি দোকানের তাকগুলিতে একটি জনপ্রিয় আইটেম। কমলা থেকে লেবু পর্যন্ত, বেছে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের রয়েছে। সাইট্রাস খাওয়ার উপকারিতা কি? এখানে ৩টি মূল সুবিধা রয়েছে:
- সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন সি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য অসুস্থতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
- সাইট্রাস ফলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। ফ্রি র্যাডিকেলগুলি ক্ষতিকারক অণু যা কোষের ক্ষতি এবং ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
- সাইট্রাস ফলগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা আপনাকে দীর্ঘক্ষণ পূর্ণ বোধ করতে এবং স্থূলতা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতেও সাহায্য করে।
কমলা লেবুর উপকারিতা:
কমলা লেবু খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এগুলি ভিটামিন সি-এর একটি ভাল উৎস, যা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। উপরন্তু, কমলা লেবুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে। কমলা লেবুও পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা রক্তচাপ বজায় রাখতে এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
কমলা লেবু কেন খাবেন?
শরীরের কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে, চোখের যত্নের জন্য, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন রাখতে, ওজন কমাতে, ত্বকের যত্নের জন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, বাতের ব্যাথা নিরাময় করতে, ক্যান্সার থেকে রক্ষা রক্ষা পেতে, কিডনিতে পাথর হওয়া থাকে নিরাপদ থাকতে।
পাতি/কাগজি লেবু খাওয়ার উপকারিতা
অন্যান্য লেবুর তুলনাই কাগজি লেবু অনেক ছোট তাই এর অন্য নাম হয়েছে পাতিলেবু। কাগজি লেবু ছোট হলেও এতে যে সুঘ্রাণ আছে তা আর কোন লেবুতে পাওয়া না। পাতিলেবুর গাছ খুব ছোট হয় এবং ডালপালা হয় লতানো ও ঝোপাল, কাঁটাযুক্ত। প্রায় সারা বছরই গাছে ফুল ও ফল ধরতে দেখা যায়। পাতিলেবুর ভেতরের কোষ হালকা সবুজ সাদা ও রসে পরিপূর্ণ থাকে।
কাগজি লেবুর উপকারিতা
কাগজি লেবু নিয়মিত লেবুর একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এটি টক, টেঞ্জি স্বাদ রয়েছে যা খাবারে গন্ধ যোগ করার জন্য বা লেমনেড তৈরির জন্য উপযুক্ত। পাতি/কাগজি লেবু ভিটামিন সি এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস, যা স্বাস্থ্যকর হজমকে উন্নীত করতে সাহায্য করে।
কাগজি লেবুতে কি কি পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়?
কাগজি বা পাতিলেবু থেকে আমরা অনেক উপকারী পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি ১০০ গ্রাম পাতিলেবু বা থেকে কাগজি যে সব উপকারী পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তা নিচে দেয়া হলো:
- ভিটামিন সি = ৬৩ মিলি
- ক্যালসিয়াম = ৯০ মিলি গ্রাম
- ভিটামিন এ = ১৫ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন বি = ১৫ মিলি গ্রাম
- ফসফরাস =২০ মিলি গ্রাম
- লৌহ =৩ মিলি গ্রাম
মুসাম্বি লেবু খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের দেশে অনেকে নিয়ম করে নানা ধরনের কিনে থাকেন। প্রতিদিন ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন যেন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ঠাসা ফল থাকে। কিন্তু অনেকেই জানেনা এই উপাদান গুলো কোন ফলে পাওয়া যায়। মুসাম্বি লেবু হলো তেমন একটি ফল যেটাতে আপনি ওই সকল পুষ্টি উপাদান পাবেন যে গুলো স্বাস্থ্য, হাড়, দাঁত ও রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
মুসাম্বি লেবুর উপকারিতা:
আমাদের দেশে সারা বছর কয়েক ধরনের ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। মুসাম্বি লেবু হল তার মধ্যে একটি। এটি অন্য ফলের তুলনাই দাম কম। এখন যে কোনও সময়ে বাজারে ভাল মানের মুসাম্বি লেবু পাওয়া যাই। এখন চলুন জেনে নেয়া যাক মুসাম্বি লেবুর কী কী উপকারিতা রয়েছে:
মুসাম্বি লেবুতে অনেক উপকারী উপাদান থাকে। ফলিক অ্যাসিড রয়েছে মুসাম্বি লেবুতে, যা আমাদের শরীরের হাড়ে ও পেশিতে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। মুসাম্বি লেবুতে ফ্লাভোনোইড থাকে যা হজমের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। মোসাম্বি লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়ায় আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। এটি আর্থরাইটিসের মতো অনেক ছোট বড় সমস্যা দূরে রাখতে মুসাম্বি লেবু সাহায্য করে।
মুসাম্বি লেবু কেন খাবেন?
মুসাম্বি লেবু হলো সিট্রাস জাতীয় ফল। এই ধরণের ফল সাধারণত আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত কল্যাণকর হয়। পাতিলেবু, কমলালেবু, মুসাম্বিলেবু ইত্যাদি সবই সাইট্রাস জাতীয় ফল।
মুসাম্বি লেবু খাবো তার কারণ হলো: হজম ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলার জন্য, পেশি ও হাড় মজবুত হয় করার জন্য, ভিটামিন সি গ্রহণের জন্য, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলার জন্য, মিনারেলস এর অভাব পূরণ করার জন্য, আর্থারাইটিস হওয়া থেকে বেঁচে থাকার জন্য। জ্বর ও বমিভাব কে নিরাময় করার জন্য। ব্লাডারের অশুদ্ধি দূর করার জন্য, গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটানোর জন্য, ত্বকের জন্য নেয়ার জন্য এবং অন্যান্য সমস্যা দূর করার জন্য।
লেবু খাওয়ার অপকারিতা কী
এতক্ষণ আমরা জানলাম বিভিন্ন ধরনের লেবু খাবার উপকারিতা। লেবুতে শুধু উপরে উপাদান থাকে এমন না। এতে কিছু পরিমান ক্ষতিকর উপাদান ও থাকে। আমরা এখন লেবু খাবার কিছু অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
আপনি যদি বিরক্তিকর বোধ করেন এবং একটি লেবু খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তবে সাবধান হন। খালি পেটে প্রচুর পরিমাণে লেবুর রস পান করলে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। কিছু লোক খুব বেশি সাইট্রাস খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া বা ক্র্যাম্প অনুভব করে।
যদি আপনি লেবু খুব বেশি পরিমানে খেয়ে থাকেন তবে এই ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়
- অ্যালার্জি মাত্রা বাড়ায়
- মুখমন্ডলের কোশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়
- মাইগ্রেন বেড়ে যায়
- উৎসেচক ভেঙে যায়
- আয়রনের মাত্রা বাড়ায়
- অ্যাসিড এবং বমির সম্ভাবনা থাকে
- শরীর শুকনো হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা
- বারবার বাথরুম পেতে পারে।
- বুক জ্বালা যন্ত্রনা করতে পারে
- কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণের অভাব দেখা দিতে পারে
- শরীরে ক্লান্তি ভর করতে পারে
- গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে
- পেট ফাঁপাসহ নানান ধরনের সমস্যা
- অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে
- পেটে ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে
- দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে
প্রতিদিন কতটুকু লেবুর রস খাওয়া যেতে পারে?
প্রতিদিন লেবুর রস এবং ফলের রস মিলিয়ে ১২০ মিলি লিটারের বেশি খাওয়া ঠিক নয়। এটা শরীরের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর হতে পারে. প্রতিদিন ১২০ মিলি লিটার পর্যন্ত লেবুর রস খাওয়া যেতে পারে। তবে যারা গর্ভবতী এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবারে সমস্যা আছে তারা ডাক্তাররের অনুমতি ছাড়া লেবুর রস এবং খালি পেটে গরম জলে লেবুর রস খাবেননা।
উপসংহার:
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকার কারণে লেবু দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই লেবুপানি পান করলে অবশ্যই কুলি করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। তবে আমরা এই প্রবন্ধ থেকে যা জানতে পড়লাম তাতে বোঝা যাই যে লেবু খাওয়ার অপকারিতার চেয়ে লেবুর রসের উপকারিতা অনেক বেশি।
তারপরও আপনার বুঝতে যদি অসুবিধা হয় অথবা লেবুর রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে আপনার আরো যদি কিছু জানার বা বলার থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সকল প্রকার ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।