ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে জানার আগ্রহ সবারই থাকে। ড্রাগন ফল এর উপকারিতা অনেক। এই ফলটি খেতে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকারী একটি ফল। ড্রাগন ফল গাছ দেখতেও অনেক সুন্দর। তবে কিছু পরিমান ড্রাগন ফলের অপকারিতা থাকতে পারে।
এই নিবন্ধে আজ আমরা আলোচনা করবো ড্রাগন ফল কী, ড্রাগন ফল এর উপকারিতা কি, ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম এবং ড্রাগন ফলের অপকারিতা কি কি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
সুচিপত্র
ড্রাগন ফল কী?
(Dragon s) ড্রাগন ফল একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যা প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খেতে বেশ সুস্বাদু এই ফল। এই ফলটি পিতায়য়া নামেও পরিচিত। ড্রাগন এক ধরনের ক্যাক্টাস ভিত্তিক ফল। বৈজ্ঞানিক নাম (Hylocereus undatus)। এর ফুল কেবল রাতেই ফোটে। বিদেশি ফলগুলোর মধ্যে ড্রাগন একটি ফল যা আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় ফল।

এই ফলটি কম-ক্যালোরিযুক্ত ফল যা ফাইবারে বেশি এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে। ফলটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে লাল, সাদা, গোলাপি এবং হলুদ রঙের ড্রাগন ফল দেখা যায়। ত্বক উজ্জ্বল, ক্যান্সারের ঝুঁকি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ড্রাগন ফলে কি উপাদান থাকে?
একটি ড্রাগন ফলে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রায় ৬০ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়, ওমেগা-৩, ভিটামিন সি এবং ওমেগা-৯ থাকে। ড্রাগন ফলে লাইকোপিনের ও বিটাক্যারোটিন মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও পাওয়া যায়। বিটাক্যারোটিন আমাদের শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়, এবং আমাদের স্বাস্থ্য, ত্বক, চোখ ও ইমিউন সিস্টেমের কল্যাণ বয়ে আনে।
যদিও এটা বিদেশী ফল এবং দাম অন্য ফলের চেয়ে একটু বেশি। কিন্তু ড্রাগন ফল আমাদের দেশে এখন চাষ করা হচ্ছে কারণ ড্রাগনের ফল স্বাদ ও পুষ্টিগুণের ভরা।ড্রাগন ফল শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। ড্রাগনের ফলের মধ্যে থাকে অনেক স্বাস্থ্যকর উপকারী উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলের লাল বা সাদা অংশে যে পরিমান উপাদান থাকে:
- ফসফরাস- ১৬-৩৫ গ্রাম
- শর্করা- ৯-১০ গ্রাম
- আয়রন- ০.৩-০.৭ মি.গ্রাম
- প্রোটিন- ০.১৫-০.৫ গ্রাম
- ভিটামিন- বি-৩ – ০.২ – ০.৪ মি গ্রাম
- আঁশ- ০.৩৩-০.৯০ গ্রাম
- পানি- ৮০-৯০ গ্রাম
- খাদ্যশক্তি- ৩৫-৫০ কিলোক্যালরি
- ক্যালসিয়াম- ৬-১০ মি গ্রাম
- চর্বি- ০.১০-০.৬ গ্রাম
- ক্যারোটিন- (Vitamin A থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন সামান্য।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা কী?
ড্রাগন ফল এর উপকারিতা কি এটা আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। ড্রাগন ফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল যার অনেক উপকারিতা রয়েছে। ড্রাগন ফলের কিছু সুবিধার মধ্যে রয়েছে: হজমের উন্নতি করা, ওজন কমাতে সাহায্য করা, প্রদাহ কমানো, জ্ঞানীয় ফাংশন প্রচার করা এবং প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করা।

ড্রাগন ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভাল উৎস যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ছাড়াও ড্রাগন ফল সুস্বাদু এবং বহুমুখী। এটি তাজা বা হিমায়িত খাওয়া যেতে পারে এবং বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ড্রাগন ফলের দাম অন্য ফলের দামের তুলনাই একটু বেশি। তাহলে বেশি দাম দিয়ে ড্রাগন ফল কেন খাবো বা ড্রাগন ফলের উপকারিতা কি, অথবা ড্রাগন ফলে অপকারিতা আছে কিনা এসব প্রশ্ন আমার বা আপনার মনে জাগতেই পারে। তাই আমরা এখন ড্রাগন ফলের ১০টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।

ড্রাগন ফলের সেরা ১০টি উপকারিতা:
- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
- হার্টের উপকার করে
- হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে
- রক্ত চলাচল বজায় রাখে
- চুলপড়া প্রতিরোধ করে
- ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে
- ড্রাগন রক্তে আইরন লেভেল বাড়িয়ে দেয়
- ম্যাগনেসিয়ামের উৎস ড্রাগন
- জয়েন্টের ব্যথা কমায়
- ডায়াবেটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে
এছাড়া ড্রাগন ফলের আরো অনেক উপকারি রয়েছে যেমন, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়, ড্রাগন ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ত্বকে করে তোলে উজ্জ্বল ও ফুরফুরে, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, ত্বকে ব্রণের সমস্যা দূর করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, হার্ট সুস্থ্য রাখতে, দেহে আয়রনের চাহিদা পূরণ করে, দ্রুত ওজন কমাতেও সাহায্য করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, বয়সের ছাপ পড়া থেকে বিরত রাখে.
বাংলাদেশে কত প্রজাতির ড্রাগন ফল পাওয়া যায়?
সাধারণত ড্রাগন ফল তিন প্রজাতির হয়ে থাকে। গাছ লাগানোর পর প্রায় ১৮ মাস পরে গাছে ফুল হয়। ফুল হওয়ার ১ মাসের মধ্যে ছোটো ছোটো ফল দেখা দেয়। আমাদের দেশে তিন প্রজাতির ফুল ও ফল বেশি হয় – সাদা, লাল ও হলুদ। তবে দেখা যাই লাল ড্রাগন ফলের চাহিদা একটু বেশি থাকে।
- লাল ড্রাগন ফল: লাল ড্রাগন ফলের খোসার রঙ লাল রঙের হয় এবং শাঁস হয় সাদা। আমাদের দেশে এই প্রজাতির ড্রাগন ফলই বেশি দেখতে পাই। টকটকে লাল সুস্বাদু ও সুমিষ্ট দানাযুক্ত লাল ড্রাগন ফল সুপারফুড হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
- কোস্টারিকা ড্রাগন ফল: কোস্টারিকা ড্রাগন ফলের খোসা এবং শাঁস উভয়ের রঙের লাল।
- হলুদ রঙের ড্রাগন ফল: এই জাতের ড্রাগন ফলের খোসা হলুদ রঙের ও শাঁসের রঙ সাদা।
ড্রাগন ফলের গাছটি কত টুকু লম্বা হয়?:
সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে ফ্লোরিডা, থাইল্যান্ড, এবং ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত বাংলাদেশে আনা হয়। ড্রাগন ফল গাছের কোন পাতা থাকে না। সাধারনত এই ফলের গাছ ১.৫ থেকে প্রায় ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বালি যুক্ত মাটিতে ড্রাগন ফলের বৃদ্ধি ভালো হয়.
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা কি যারা জানেনা তাদের মনে এমন প্রশ্ন হতেই পারে, যে গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া কি ঠিক হবে?। ড্রাগন ফলে ফাইবারের পরিমাণে অনেক যা সমস্ত গর্ভবতী মহিলাদের উপযুক্ত খাবার। ড্রাগনের ফলে কার্বোহাইড্রেট উত্সগুলিতে সমৃদ্ধ যা মাতৃস্বাস্থ্য এবং শিশু বৃদ্ধি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে. এই ফলের একটি অংশে প্রায় 0.3-0.9 গ্রাম ফাইবার থাকে। তবে ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম জানাটাও বেশ জরুরি।

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের ১০টি উপকারিতা:
- সংক্রমণের বিরুদ্ধে বাধার সৃষ্টি করে
- শক্তি প্রদেয়কারী কার্বোহাইড্রেট
- ফ্যাট বা স্নেহ পদার্থের সমৃদ্ধ উৎস
- জন্ম ত্রুটিগুলি রোধ করে
- কোষ্ঠকাঠিণ্য থেকে স্বস্তি আনে
- হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়
- হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে
- প্রাক-এক্ল্যাম্পসিয়া প্রতিরোধ করে
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট একটি উত্স
- রক্ত চলাচল বজায় রাখে
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
এতোক্ষণ আমরা জানলাম ড্রাগন ফলের সুবিধার কথা। কিন্তু ড্রাগন ফলেরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। ড্রাগন ফলের অপকারিতা সম্বন্ধেও আমাদের সচেতন থাকতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে অ্যালার্জিও হতে পারে, নিম্ন রক্ত চাপ হতে পারে, অনেকের ডায়রিয়ায় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি। বেশি পরিমান ড্রাগন ফল খেলে শরীরের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার কারণে যদি অসুস্থতা বোধ করেন তবে তখনি এই ফল খাওয়া বন্ধ করে দিন এবং তাৎক্ষনিকভাবে আপনার নিকটস্থ কোনও অভিজ্ঞ ডাক্তাররের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

ড্রাগন ফল, যাকে পিটায়া বা পিটাহায়াও বলা হয়, এটি একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যা বিশ্বের অনেক জায়গায় জনপ্রিয়। ফল প্রায়ই তাজা খাওয়া হয় বা বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা হয়। ড্রাগন ফলের চাষ বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি হল একটি টবে ফল চাষ করা।
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায় যে ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক বেশি এবং ড্রাগন ফলের অপকারিতা খুব কম। ড্রাগন ফল আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা অপরিসীম। আশা করছি ড্রাগন ফল এর উপকারিতা কি এটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছেন। আপনার যদি আরো কিছু জানার থাকে তবে দয়া করে কমেন্টে জানান। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।