কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার – যে ১০টি কারণে কিডনি নষ্ট হয়

কিডনি রোগের লক্ষণ কী সেটা যদি আমরা জেনে রাখতে পারি তবে আমরা আমাদের কিডনিকে যেকোনো ক্ষতি হাত থাকে বাঁচাতে পারি। এর সাথে সাথে কিডনি রোগের প্রতিকারকিডনি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিত।

কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ অনেক গুলো হতে পারে। কিডনির ক্ষতির কিছু সাধারণ কারণ হল: ডায়াবেটিস, সিরোসিস এবং কিডনি ক্যান্সার। কিডনির ক্ষতির অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে: উচ্চ রক্তচাপ, টক্সিন এবং ডিহাইড্রেশন।

কিডনি মানব দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। দেহের রক্ত পরিশোধন করে দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া এর প্রধান কাজ। কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে দেহে নানাবিদ সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অনেক সময় আমাদের নিজেদের অবহেলা , অসচেতনতা ও বদভ্যাস এর কারণে নিজেদের অজান্তেই কিডনির ক্ষতি করে ফেলি। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা এমন কিছু কাজ করে থাকি যা কিডনির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। আজ আমরা কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং যে ১০টি ভুলের কারণে কিডনি নষ্ট হয় নিয়ে আলোচনা করবো।

১০টি – কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ

কিডনি শরীরের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ যা রক্ত পরিশোধন এবং তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, এটি বেশ কয়েকটি উপসর্গের কারণ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে: বমি বমি ভাব, বমি, ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস, মাথা ঘোরা এবং বিভ্রান্তি।

তাহলে চলুন জেনে নেই -প্রতিদিন যে ১০টি ভুলের জন্য আমাদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

১.পর্যাপ্ত পানি পান না করা :-

কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত পানি পান না করা কিডনি সাধারণত রক্ত পরিশোধন করে শরীর থেকে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ মূত্রকারে বের করে দিয়ে লোহিত রক্ত কণিকার ভারসাম্য রাখা করে থাকে। কিন্তু শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যাই। যার ফলে রক্তে বিভিন্ন দূষিত পদার্থ জমা হতে থাকে ,যার ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই কিডনি সুস্থতায় প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

২. দীর্যসময় প্রস্রাব আটকে রাখা :-

দীর্ঘসময় প্রস্রাব আটকিয়ে রাখা কিডনি নষ্ট হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ। দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখা হলে কিডনিতে ব্যাপক চাপ পরে। প্রসাবে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ জমা হয়ে কিডনিতে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত সময় প্রস্রাব চেপে রাখলে পেশির ওপর চাপ সৃষ্টি হয় যার ফলে ডাইভেটিকেউলোসিস এর মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাই। এসব কারণে কিডনি তার কর্ম ক্ষমতা হারায় এমনকি সম্পূর্ণ বিকল হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

৩. এলকোহল আসক্তি :-

খুব সহজে অল্প সময়ে কিডনি নষ্ট হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এলকোহল আসক্তি। এলকোহল একটি রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ। তাছাড়া এর সাথে বিভিন্ন ক্ষতিকারক টক্সিক উপাদান মিশে থাকে। আর এসকল টক্সিক উপাদান মানুষ শরীর থেকে বর্জ আকারে বের করার জন্য কিডনিকে অনেক বেশি চাপ সহ্য করতে হয়। যার ফলে কিডনি তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারায় এমনকি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। সুতরাং কিডনিকে সুস্থ রাখতে অবশ্যয় এলকোহল আসক্তি থেকে বিরত থাকা জরুরি।

৪. ব্যাথানাশক এর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া :-

অল্প মাথাব্যাথা বা গলা ব্যাথা অনেকেই ব্যাথানাশক এর প্রতি নির্ভরশীল হওয়ার বাজে অভ্যাস রয়েছে। প্যারাসিটামল বা ব্যাথানাশক ওষুদের কিছু পার্সপ্রত্রিক্রিয়া আছে। কিডনি সহ অন্যান্ন নানা অঙ্গ প্রতঙ্গের নানা রকমের ক্ষতি সাধন করে এসকল ব্যাথা নাশক ওষুধ। অতিরিক্ত মাতা ব্যাথা নাশকের প্রতি নির্ভরতা রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাঁধা প্রদান করে তাই কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করতে ব্যাথানাশক এর প্রতি নির্ভরতা কমানো জরুরি।

৫. অতিরিক্ত লবন খাওয়া :-

অতিরিক্ত লবন খাওয়া কিডনি নষ্ট হওয়ার একটি প্রধান কারণ। খাবারকে সুস্বাদু ও মজাদার করার জন্য আমরা খাবারে প্যাকেটজাত লবন ব্যবহার করে থাকি। খাবারে ব্যবহার করা লবন আমাদের শরীরের সোডিয়ামের অন্যতম উৎস। খাবার লবনে থাকার বেশিরভাগ অংশই কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য আকারে বের হয়ে আসে। আর সেই সোডিয়ামকে প্রক্রিয়াজাত করতে কিডনিকে অনেক বেশি ব্যাস্ত থাকতে হয়। যার ফলে কিডনির ওপর চাপের সৃষ্টি হয় ,ফলে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাই খাবারে অতিরিক্ত লবন কাউয়া থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।

৬. অতিরিক্ত ক্যাফেইন আসক্তি :-

অতিরিক্ত ক্যাফেইন আসক্তি কিডনি নষ্ট হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ। আমরা অনেকেই তৃষ্ণা পেলে পানি পান না করে কোমল পানিয় এর ওপর নির্ভর হয়ে থাকি যা একেবারেই টিক নয়। এসব কোমল পানির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যাফেইন। এসব অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। আর অতিরিক্ত রক্তচাপ কিডনির ওপর চাপ প্রয়োগ করে এবং কিডনি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ক্যাফেইন আসক্তি থেকে বিরত থাকা জরুরি।

৭. অতিরিক্ত রাত জাগার অভ্যাস :-

ঘুম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতজ্ঞের কোষ বা কলা সমূহ নতুন করে গঠিত হয় অর্থাৎ টিস্যুর নবায়ন ঘটে। প্রতিদিন নিয়মিত সঠিক মাত্রার পরিমান মতো না ঘুমালে শরীরের অন্য অঙ্গের পাশাপাশি কিডনির ও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই কিডনি তথা সম্পূর্ণ শরীরের সার্বিক সুস্থতা নির্মিত করতে পর্যাপ্ত ঘুমানো জরুরি।

৮. বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া

অতিরিক্ত লাল মাংস বা গরু-ছাগলের মাংস খেলে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তবে মাংস বেশি খাওয়া ঠিক না। কারণ এতে প্রচুর পরিমান প্রোটিন থাকে যা শরীরের ওজন বেড়ে গিয়ে কিডনির ওপর চাপ তৈরি করতে সাহায্য করে। তবে আপনার যদি কিডনির জটিল সমস্যা না থাকে এবং চিকিৎসক যদি এ ব্যাপারে নিষেধ না করে তবে এ ধরণের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন।

৯. ধূমপানে আসক্তি

ধূমপান কিডনিসহ শরীরের সব অঙ্গের জন্যই ক্ষতিকর। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, ধূমপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ, প্রতি বছর 150,000 এরও বেশি মৃত্যুর সাথে। ধূমপান এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণার পাশাপাশি, গবেষণাও ইঙ্গিত করে যে ধূমপান একটি আসক্তি যা একজন ব্যক্তির জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে ক্ষতি করতে পারে।

ধূমপান হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্যের অবস্থাতেও অবদান রাখে। ধূমপান আপনার কিডনির ক্ষতি করতে পারে। ধূমপান আপনার অন্যান্য ধরণের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়, যেমন তীব্র রেনাল ব্যর্থতা এবং নেফ্রোনোফথিসিস (একটি বিরল অবস্থা যা কিডনি ব্যর্থতা সৃষ্টি করে)।

১০. সর্দি-কাশিকে পাত্তা না দেওয়া

একটি সাধারণ ঠান্ডা একটি উপদ্রব হতে পারে, কিন্তু কিছু মানুষের জন্য এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। কাশি এবং হাঁচি হল সর্দি-কাশির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ, কিন্তু এগুলিই একমাত্র নয়। ঠান্ডা লাগার কারণে জ্বর, বুকের ভিড় এবং মাথাব্যথাও হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ঠান্ডা এমনকি নিউমোনিয়া হতে পারে।

কিডনির ক্ষতি হল সাধারণ সর্দি থেকে সবচেয়ে সাধারণ জটিলতাগুলির মধ্যে একটি। গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সর্দিতে আক্রান্ত হন তাদের দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যকারিতা কম থাকে যারা অসুস্থ হয় না তাদের তুলনায়।

কিডনি রোগের লক্ষণ কি?

কিডনি রোগের লক্ষণ কি এটা জানা রাখা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোন উপসর্গ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় না। কিডনি ধীরে ধীরে কম সক্রিয় হয় এবং ফলস্বরূপ, ব্যক্তি অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসার মতো লক্ষণগুলি অনুভব করতে শুরু করে। আপনার কিডনির ক্ষতি হলে, কিছু লক্ষণ আছে যা আপনি অনুভব করবেন। কিছু সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

কিডনি নষ্ট হওয়ার লক্ষণ:

আপনি যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে আপনার কিডনির ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে এবং আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চিকিত্সা শুরু করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।

কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ:

কিডনি রোগ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা অক্ষমতা বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কিডনি রোগের অনেক কারণ রয়েছে এবং প্রতিটি ব্যক্তির রোগ হওয়ার ঝুঁকি আলাদা। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের দুটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এই অবস্থাগুলি আপনার রক্তচাপ বাড়িয়ে এবং আপনার রক্তনালীগুলির অন্যান্য ক্ষতি করে কিডনি সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

কিডনি রোগের প্রতিকার

ধূমপান আপনার কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সিগারেটের ধোঁয়ায় এমন রাসায়নিক থাকে যা আপনার কিডনির কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা রেনাল ব্যর্থতার দিকে পরিচালিত করে। কিডনির জন্য ক্ষতিকর ওষুধ সেবনও কিডনি রোগের একটি বড় কারণ। এই ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে কেমোথেরাপির ওষুধ, স্টেরয়েড এবং অ্যান্টি-ইনফেকটিভ যেমন অ্যান্টিবায়োটিক।

কিডনি ভালো রাখার উপায় কী?

কিডনি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। কারণ কিডনি আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমাদের শরীর ভালো রাখতে কিডনির ভূমিকা অপরিসীম।

ভাল খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনার কিডনি সুস্থ রাখার চাবিকাঠি। আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশন বলে যে একটি সুষম খাদ্য আপনার কিডনি রক্ষার সর্বোত্তম উপায়, কারণ এতে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং চর্বিযুক্ত খাবার এবং নোনতা খাবার এড়িয়ে চলে।

কিডনির ব্যথা কোথায় হয়?

কিডনি ব্যথা কোথায় হয় এটা অনেকেই জানে না। যার জন্য অনেক সময় বড়ো ঝুঁকিতে পড়তে হয়। সাধারণত কিডনিজনিত ব্যথা মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাম পাশে হয়ে থাকে। অনেক সময় পেছনের পাঁজরের নিচের অংশে অনুভূত হয়ে থাকে। এমনকি আপনার কোমরের দুই পাশেও অনুভব করতে পারেন।

এই ব্যাথা আপনার জীবনেকে অনেক বেদনা দায়ক করে তুলতে পারে। কারণ যখন কিডনিজনিত ব্যথা অনুভব করবেন তখন শোয়া-বসা, হাটা চলা, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি কোনো কিছুতেই শান্তি মিলবেনা।

উপসংহার

আজ আমরা এই নিবন্ধ থেকে কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানলাম। কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ যে গুলো জানলাম সে বিষয়ে অবশ্যই সচেতন থাকবো। পাশাপাশি কিডনি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে যা জানলাম তা মেনে চলতে হবে। বেঁচে থাকতে হলে কিডনির যত্ন নেয়া বাধ্যতা মূলক। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ও আছে। এ সম্পর্কে যদি আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্ট বক্সে জানান। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

Exit mobile version